চিরকুট
আমাদের বিয়েটা হয়েছিল একটু তাড়াহুড়ো করেই। আমাদের মানে আমার আর স্বপ্নার।
ভার্সিটিতে
পড়তাম আমরা এক সাথে, একই ডিপার্টমেন্টে। শেষ দু’বছর আমরা নিরলস প্রেম
করেছি। টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরী, নিউমার্কেট-বলাকা, শাহবাগ, আজিজ সুপার
মার্কেট, বকুলতলা, বাংলা একাডেমী, বইমেলা, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা-
সব ছিল আমাদের জুতোর তলায়। এর মধ্যে কোন কোন দিন আবার ছুটতাম দুজনে মিলে
বেইলী রোডের ওদিকে। সে এক রকম দিন ছিল বটে!
যাই
হোক, এক সময় প্রাণের মেলা সাঙ্গ হলো। পাশ করে আমি চাকরিতে ঢুকলাম।
স্বপ্নার তখনও কোন ব্যবস্থা হয়নি, হবে হবে করছে। এদিকে সে পড়েছে আর এক
জ্বালায়। আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মেয়ের সুখ্যাতিতে দশদিক মাতোয়ারা। প্রতিদিন
দু’এক জায়গা থেকে সম্বন্ধ আসছে, পাত্রপক্ষের ঘন ঘন যাওয়া আসায় স্বপ্নাদের
নাখালপাড়ার বাড়িটার সামনে রীতিমতো পথ পড়ে যাওয়ার যোগাড়। তাদের প্রায় সবাই
ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার, তার মধ্যে দু’একজন আবার প্রবাসে ধাতস্থ।
ব্যাংক-ব্যালেন্স, গাড়ি-বাড়ি এসবে তাদের জুড়ি কেবল তারাই। তাদের তুলনায় আমি
পিছিয়ে অনেকটা। একটা বেসরকারি ফার্মে সবে চাকরিতে ঢুকেছি। বেতন যা পাই তা
দিয়ে কোনমতে নিজের খরচ চলে। এ রকম অবস্থায় একা বাসা নিয়ে আজকের বাজারে টিকে
থাকা মুশকিল। তাই সে চেষ্টাটিও করি নি। হল ছেড়ে দিয়ে ইন্দিরা রোডে
কর্মজীবিদের একটা ছোট মেসে এসে উঠেছি।
ফেসবুক
সে
মুহূর্তে মেয়ের বাবা যেন একটু বিপাকেই পড়ে গিয়েছিলেন। সারাজীবন মেয়ে যা
চেয়েছে তাই দিয়ে এসেছেন বিনা বাক্য-ব্যয়ে। এবারও তার অন্যথা করতে পারলেন
না। প্রতিষ্ঠিত ঐ সব ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছেড়ে মেয়ে যখন আমার দিকে ঝুঁকল,
তখন একটু গোমড়া মুখেই একমাত্র মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিলেন।
আমাদের
বিয়ে হয়েছিল ঢাকাতেই। স্বপ্নাদের বিরাট বাড়ি। সেখানেই হয়েছিল বিয়ের
অনুষ্ঠান। আমরা বৌভাত করেছিলাম মিরপুরের একটা কমিউনিটি সেন্টারে। আব্বা-মা
এসেছিলেন দেশের বাড়ি থেকে, খালা-খালুরা এসেছিলেন রাজশাহী থেকে। খুব ঘনিষ্ট
কিছু বন্ধু-বান্ধব উপস্থিত ছিল আমাদের বিয়েতে। তাদের প্রায় সবাই আমার আর
স্বপ্নার কমন বন্ধু। এক সাথে পড়াশোনা করলে যা হয়। অজয়ও উপস্থিত ছিল আমাদের
বিয়েতে। ওর কথা পরে বলছি।
বিয়ের
পর আমাকে বাসা নিতে হয়েছিল। উত্তরায় বাসা নিলাম। চার নম্বর সেক্টরে।
আড়াইরুমের বাসা। বেশ কাটছিল দিনগুলো। তখনও চাকরিতে পুরোপুরি মন লাগাতে পারি
নি। মাঝে মাঝেই মনের জানালায় উঁকি দিয়ে যেত ফেলে আসা দিনগুলো। ভীষণ মিস
করতাম অজয়কে। আমার অফিস গুলশানে, ওর ধানমন্ডিতে। আমার একবারে অন্য পাশে।
তখন আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো না বললেই চলে। যদিও ফোনে যোগাযোগ ছিল সব সময়।
আমাদের
বিয়ের মাসতিনেক বাদে স্বপ্নার চাকরি ঠিক হয়ে গেল। খুব বড় অফিস। বনানীতে।
ভালো বেতন। স্বপ্না বায়না ধরল চাকরিতে ঢোকার আগে বাইরে কোথাও বেড়াতে যাবে।
ছুটি পাইনি বলে বিয়ের পরপর আমরা কোথাও বেড়াতে যেতে পারি নি। তাছাড়া সে সময়
হাতও একদম খালি হয়ে গিয়েছিল, বিয়ের জন্য তো আর আগে-ভাগে আলাদা করে টাকা
জমাই নি। তাই রাজি হলাম। আমরা নেপাল গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে অজয়ও গিয়েছিল।
অজয়ের
কথা বলি। দারুণ মিশুক ছেলে অজয়। ভার্সিটি জীবনে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
স্বপ্নারও তাই। কতটা কাছের সেটা বলি। আমাদের বাসর রাতে, শেষ রাতের দিকে যখন
আমার চোখের পাতা একটু লেগে এসেছিল তখন স্বপ্না দুম করে ফোন করে বসেছিল এই
অজয়কেই! বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বেশি রাতে ফিরে তখন কাঁচা ঘুমে অজয়। তারপরও
ফোন ধরেছিল, বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিল দু’জনে। তার মধ্যে কিছু
প্রাপ্তবয়স্কদের আলাপও ছিল।
স্বপ্নার
চাকরি ঠিক হওয়ার পর যখন কথাবার্তা চলছিল আমরা নেপাল যাব তখন স্বপ্নাই
প্রস্তাবটা দিল। বললো একদিন, ‘চলো, আমরা অজয়কেও সাথে নিয়ে যাই।’
বিয়ের
পর সেবারই আমরা প্রথম বাইরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি। বলতে গেলে সেটাই ছিল
আমাদের হানিমুন ট্যুর। সেখানে বন্ধুকে লেজে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার কি আছে!
তাছাড়া আমরা দু’জন যখন হাতে হাত রেখে নেপালে ঘুরে বেড়াব, ভেসে বেড়াব
মেঘেদের দেশে, তখন অজয় বেচারা একা একা কি করবে? ওর বোরিং লাগবে না? কিন্তু
স্বপ্না কোন কথা শুনতে নারাজ। ‘অজয়কে সাথে নিতে হবে, ব্যাস্।’
অজয়কে
যখন বললাম, ‘চল, ঘুরে আসি নেপাল’, তখন অজয়েরও গালে মাছি ঢোকার যোগাড়।
‘এখন? না না, তোরা যা।’ অজয়ের চোখ গোল হয়ে গিয়েছিল। খুব দোনামনা করছিল যাবে
কি যাবে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রাজি হয়েছিল অজয়। স্বপ্নাই ওকে রাজি
করিয়েছিল।
নেপালে
বেড়াতে যাওয়ার এই একটা সুবিধা। আগে থেকে ভিসা-টিসা করার ঝামেলা নেই। সোজা
চলে যাও ত্রিভুবন বিমান বন্দর। বিমান থেকে নেমে একটা ফরম পূরণ করো,
অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ঢুকে পড় গটগট করে। দু’পাঁচদিন কাটিয়ে ফিরে আসো।
আমারা
আমাদের নেপাল-ট্যুরটা একটু ভিন্নভাবে প্ল্যান করেছিলাম। সে অনুযায়ী
ত্রিভুবন বিমান বন্দর থেকে আমরা চলে গিয়েছিলাম সোজা পোখারা, একটা প্রাইভেট
কার নিয়ে। আমাদের যেতে সময় লেগেছিল ছয়-সাত ঘণ্টা। হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে
মেলা রাত হয়ে গিয়েছিল সেদিন আমাদের।
বলে
নিই, সেবার আমরা গিয়েছিলাম খুব বাজে মৌসুমে। তখন বর্ষাকাল। আগে থেকে ঠিক
করে রেখেছিলাম পরের দিন খুব সকালে আমরা চলে যাব সারাংকোট। সূর্যোদয় দেখব।
খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য হোটেলের রিসিপসনে কথা বললাম। তখনই জানতে পারলাম
আবহাওয়া ভালো যাচ্ছে না, ক’দিন ধরে সকালে খুব বৃষ্টি হচ্ছে, সূর্যোদয়
দেখার প্রোগ্রামটা তাই ভেস্তে যেতে পারে। হলোও তাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে
শুনি বৃষ্টির শব্দ। স্বপ্না তখনও কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে।
গত
রাতের করা প্রোগ্রাম অনুযায়ী জীপ এসে দাঁড়িয়ে আছে হোটেলের গেটে।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ রকম বৃষ্টির মধ্যে যাওয়া কি ঠিক হবে?’
তখন অবশ্য বৃষ্টির তোড় একটু কমেছে। ড্রাইভার হিন্দীতে বললো, ‘একটু রিস্কি আছে।’
সারাংকোট
জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উঁচুতে, পোখারা থেকে ছয়-সাত
কিলোমিটা দূরে। সংকীর্ণ এবং এবং আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে উঠতে হয়
উপরে। এক ঘণ্টার মতো লাগে জীপে যেতে। বৃষ্টির দিনে রাস্তাটা পিচ্ছিল হয়ে
থাকার কথা। সে কারেণে এই রকম আবহাওয়ায় ঐ পথ না মাড়ানোই ভালো। তাছাড়া শুধু
শুধু যেয়েই বা কি লাভ? ঘন মেঘে আকাশ ঢেকে আছে। সূর্যোদয় তো দেখতে পাওয়ার
কোন আশাই নেই! আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না।
স্বপ্না
বললো, ‘আমি যাব না। আমার মাথাব্যথা করছে ভীষণ। তোমরা চাইলে যেতে পার। আমি
সেই ফাঁকে আরও একটু ঘুমিয়ে নিই। মাথাব্যথাটা কমতে পারে।’
কিন্তু
অজয় জেদ ধরল। এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই সে যাবে সারাংকোট। ওর একটাই কথা,
‘সূর্যোদয় দেখতে পাওয়ার দরকার নেই। এতদূর এলাম, এই মেইন ট্যুরিস্ট
ডেস্টিনেশনটা না দেখে কিছুতেই যাব না।’
শেষ
পর্যন্ত স্বপ্নাকে হোটেলে রেখেই আমরা চললাম সারাংকোটের উদ্দেশ্যে। যাই
হোক, আমরা পৌঁছেছিলাম ভালোয় ভালোয়। আগে থেকে যা অনুমিত ছিল তাই হলো। তখন
অবশ্য বৃষ্টি হচ্ছিল না, কিন্তু আকাশ ঢাকা ছিল মেঘে। দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে
উড়ে আসছে মেঘেদের দল। সেগুলোকে দেখতে লাগছিল সাদা ধোঁয়ার মতো। দক্ষিণে নিচে
পুরো পোখারা শহর, বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে রয়েছে। উত্তর দিকে তাকালে
দূর-পুবে অন্নপূর্ণা রেঞ্জ। একই দিকে ধলগিরি। ঘোরলাগা সকালে দূরে পাহাড়ের
চূড়া খুঁজছিলাম। ঠিক তখনই একটা শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দের উৎসের দিকে চোখ
ফেরাতেই দেখলাম অজয়কে গড়িয়ে নিচে পড়তে। প্রথমটাতে নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস
করতে পারছিলাম না। গড়াতে গড়াতে বেশ কিছুটা নিচে গিয়ে থামল অজয়। দেখলাম ওর
কপালের একপাশ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
বুকে
আর মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল অজয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাড়াহুড়ো করে
তাকে নিয়ে আসা হলো কাঠমণ্ডুতে, অন্নপূর্ণা নিউরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটে।
দু’দিন পরে সেখানে মারা যায় সে।
পাঁচ
বছর হয়ে গেছে অজয় চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। পাঁচ বছর কম সময় নয়। কিন্তু মনে
হয় এই তো সেদিন। এই পাঁচ বছর আমরা অজয়কে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি নি।
চশমা পরা লম্বাচুলের অজয়ের সদাহাস্য মুখখানি সব সময় ছায়াসঙ্গী হয়ে হেঁটেছে
আমাদের সাথে। সব সময় একটা অপরাধবোধ কাজ করে আমার মধ্যে। স্বপ্নার মধ্যেও।
আমরা অতটা জোরাজুরি না করলে অজয় হয়তো যেত না সেবার আমাদের সাথে। আর তার
জীবনটাও থেমে যেত না এভাবে, অকালে।
এ
ক’বছরে আমরা আর কোথাও বেড়াতে যাই নি। সত্যি বলতে কি, অজয়ের মৃত্যুতে আমরা
ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলাম। স্বপ্নাতো এক প্রকার খাওয়া-দাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিল।
অজয়ের মৃত্যুটাকে কিছুতেই যেন সে মেনে নিতে পারছিল না। স্বাভাবিক জীবনে
ফিরতে পারছিল না সে কোনভাবেই। সে কারণে ওর চাকরিতে ঢোকাও পিছিয়ে গিয়েছিল
দুই মাস। সেই দুই মাস সব কিছুর মধ্যে থেকেও স্বপ্না ছিল সবার কাছ থেকে অনেক
দূরে। কারো সাথে কথা বলতে চাইত না। ঘনিষ্ট বন্ধুদের সাথেও না। একই ছাদের
নিচে আমরা থাকতাম। কিন্তু কিছুতেই যেন স্বপ্নার কাছে পৌঁছাতে পারতাম না।
আমার সাথে ওর কথা হতো খুব কম। যাও বা হতো তাও অজয়কে নিয়ে। অজয়ের স্মৃতি
জড়িয়ে থাকত তাতে। হঠাৎ হঠাৎ মাঝপথে কথা থামিয়ে চোখ মুছত স্বপ্না। আমি তাকে
সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। অনেক সময় তাতে হিতে বিপরীত হতো।
এখন
স্বপ্না অনেকটাই স্বাভাবিক। আমিও। মাঝে মাঝে অজয়ের কথা যে আমাদের মনে পড়ে
না তা নয়। কিন্তু সে যেন বিদ্যুৎ ঝলকের মতো। ক্ষণিকের তরে ভেসে আসে তার
স্মৃতি, আমাদেরকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে যায় আবার চোখের পলকে। কিন্তু হঠাৎ কি
হলো, এ বছর অজয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বপ্না আবদার করে বসল নেপাল বেড়াতে
যাবে। বরাবর জেদী মেয়ে স্বপ্না। তাই যেতেই হলো। আমরা উঠলাম পোখারায় একই
হোটেলে, আগেরবার এসে যেখানে উঠেছিলাম। এবার আমরা গেলাম সেপ্টেম্বর মাসে।
নেপাল বেড়ানোর জন্য দারুণ সময় এটা। স্বপ্নার ইচ্ছে ছিল পরদিন সকালে
সারাংকোট যাবে। ওকে নিয়ে গেলাম। ভোর চারটের দিকে আমরা হোটেল থেকে যাত্রা
শুরু করেছিলাম। যখন সারাংকোট পৌঁছেছিলাম তখন সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু
করেছে। কিন্তু তখনও দূরের পাহাড়-চূড়াগুলো সূর্যের কিরণে সোনারং ধরে নি।mimi
স্বপ্নার
পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। চুপচাপ। মনে মনে সেই জায়গাটা খুঁজে ফিরছিলাম। গতবার
এসে যেখানে দাঁড়িয়ে আমি দূর পাহাড়ের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম। যেখানে
অজয় দাঁড়িয়েছিল। যেখান থেকে সে গড়িয়ে পড়েছিল নিচে। স্বপ্নাকে ডেকে দেখালাম
সেই জায়গাটা। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল স্বপ্না সেখানে। একটা
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শব্দ করে। তারপর পার্স খুলে ছোট্ট একটা চিরকুট বের করে
হাতের মুঠিতে কুণ্ডলী পাকিয়ে দূরে ছুড়ে দিল। ঝিরিঝিরি বাতাসে হালকা
চিরকুটটি বাঁক খেয়ে উড়ে এলো আমার কাছে। হাত বাড়িয়ে আমি ধরে ফেললাম সেটা।
মাত্র দু’টো শব্দ শুধু লেখা তাতে, ‘ভালো থাকিস’। এতদিন বাদেও চিনতে অসুবিধা
হলো না আমার চিরকুটের হাতের লেখাটা। মুক্তোর মতো গোটা গোটা করে লেখা। সাইন
পেন দিয়ে। অজয়ের। কবে লিখেছিল অজয় এই চিরকুটটা স্বপ্নাকে? সেই বৃষ্টিভেজা
সকালে নয় তো, যেদিন হোটেলে স্বপ্নাকে রেখে আমরা দু’জন এসেছিলাম এই
সারাংকোটে? যেদিন অজয় পড়ে গিয়েছিল পাহাড়ের খাঁদে? তবে কি অজয় আগে থেকেই
জানত সে আর ফিরবে না সারাংকোট থেকে? তবে কি আত্মহত্যা করেছিল অজয়! যদি তাই
হয়, কি এমন দুঃখ ছিল অজয়ের? স্বপ্না কি অজয়ের সে দুঃখের খবর জানত?
ধেয়ে
আসা প্রশ্নগুলোকে দূরে হটাতেই যেন আমি চিরকুটটা ছুড়ে দিলাম দূরে। ঝিরিঝিরি
বাতাসে উড়তে উড়তে একটু পরেই দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল তা। বিড়বিড় করে
বললাম, ‘ভালো থাকিস।’ ঠিক সে সময় স্বপ্নার চোখের কোণ চিকচিক করে উঠতে
দেখলাম কাঁচা আলোয়।
[জানুয়ারী, ২০১৫ /// গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক]
[জানুয়ারী, ২০১৫ /// গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক]
Comments
Post a Comment